Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

বঙ্গবন্ধুর মৎস্যখাত উন্নয়ন দর্শন : বর্তমান প্রেক্ষিত

কৃষিবিদ মো. আলতাফ হোসেন চৌধুরী

১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের পর মুক্ত সোনার বাংলা বিনির্মাণের লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রহণ করেছিলেন বিভিন্ন বৈপ্লবিক কর্মসূচি। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য ১৯৭২ সালের জুলাই মাসে কুমিল্লার এক জনসভায় ঘোষণা করেছিলেন মাছ হবে ২য় প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী সম্পদ। এই উদ্দেশ্যকে সফল করার জন্য ১৯৭৩ সালে জাতির পিতা গণভবনের লেকে পোনা মাছ অবমুক্ত করে মৎস্য উৎপাদনে সামাজিক আন্দোলনের শুভ সূচনা করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য বাঙালি জাতির জন্য ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতাবিরোধী প্রতিক্রীয়াশীল চক্র জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে আর এখানেই শুরু হয় মাছের আঁতুড়ঘরের অপমৃত্যু। কিন্তু বীরের জাতি বাঙালি রক্তের দাগ শুকানোর পূর্বেই মাছ চাষে মনোযোগী হয়ে উঠে।
মাছচাষ মূলত তিনটি বিষয়ের উপর ওতপ্রোতভাবে জড়িত, বিষয়গুলো হলো : (১) ফিড (খাবার), (২) সিড (পোনা), (৩) ম্যানেজমেন্ট (ব্যবস্থাপনা)। উক্ত বিষয়গুলোর একটির ঘাটতি হলেও মাছচাষ ব্যাহত হয়। বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মাছ চাষে অনেক সমস্যা দেখা যায়। তাছাড়াও মাটি ও পানির ভৌত রাসায়নিক গুণাবলি মাছ চাষের জন্য বড় নিয়ামক হিসাবে কাজ করে। তাপমাত্রা কম ও ভৌত রাসায়নিক গুণাবলির সঠিক সমন্বয় মাটি ও পানিতে বিদ্যমান না থাকার কারণে মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণীর সুস্থ্ভাবে বেঁচে থাকা এবং বৃদ্ধি জটিল হয়ে পড়ে। অতীতে প্রাকৃতিক জলাশয় থেকে ব্যাপক মৎস্য আহরণ সম্ভব ছিল কিন্তু বর্তমানে মনুষ্য সৃষ্ট কারণে প্রাকৃতিক জলাশয়ে মাছের উৎপাদন ব্যাপক মাত্রায় হ্রাস পেয়েছে। প্রাকৃতিকভাবে মাছের উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার কারণে চাষের মাছের ওপর নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে অনেকগুণ। আর অধিক ঘনত্বে মাছচাষ করতে এবং অধিক উৎপাদন লাভের জন্য একদিকে যেমন অধিক পুঁজির প্রয়োজন তেমনি মাছের রোগবালাইসহ বিভিন্ন সমস্যাও দেখা যায়। তাই এই মৎস্যসম্পদের ক্ষতি মোকাবেলায় বাঙালি জাতিকে প্রাণিজ (মৎস্য) প্রোটিন থেকে বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষার জন্য মৎস্য অধিদপ্তর মৎস্য খাতে অর্জিত সাফল্য ও উন্নয়ন সম্ভাবনাসমূহ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি : স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে যেখানে চাষকৃত মাছের উৎপাদন ছিল নগণ্য তা ২০১৭-১৮ আর্থিক সালে ৪২.৭৭ লক্ষ মে. টনে দাঁড়িয়েছে।
বদ্ধ জলাশয়ে মৎস্য চাষ নিবিড়করণ : ব্রæড ব্যাংক স্থাপন প্রকল্পের মাধ্যমে চীন থেকে আমদানিকৃত সর্বোচ্চ জেনেটিক গুণ সম্পন্ন প্রায় ৩৯ হাজার সিলভার কার্প, বিগহেড কার্প ও গ্রাস কার্প এর পোনা দেশের ৯টি সরকারি হ্যাচারিতে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়। পরবর্তীতে এসব মাছ অন্যান্য সরকারি হ্যাচারিতে সরবরাহ করা হয় (মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার গোবিন্দগঞ্জ, গাইবান্ধা)
পোনা অবমুক্তি কার্যক্রম ও বিল নার্সারি স্থাপন : ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ কার্যক্রমের ফলে ২০৫০ মেট্রিক টন মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
সমাজভিত্তিক মৎস্য ব্যবস্থাপনা ও মৎস্য অভয়াশ্রম স্থাপন : এ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের বিলুপ্ত প্রায় মৎস্য প্রজাতির উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।
মাছের আবাসস্থল উন্নয়ন : এর মাধ্যমে ২০১৮-১৯ আর্থিক সালে ৮১২ হে. জলাশয় পুনঃখননের মাধ্যমে গড়ে প্রায় ৬৫০০ মে.টন অতিরিক্ত মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।
মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র সংরক্ষণ : গৃহীত উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে ২০১১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত হালদা নদী থেকে মোট ৩৭৫৭ কেজি কৌলিতাত্তি¡ক বিশুদ্ধ মানের রেণু উৎপাদিত হচ্ছে।
পরিবেশবান্ধব চিংড়ি চাষ সম্প্রসারণ : এ কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে ২০১৭-১৮ সালে ২৫৪৩৬৭ মে.টন চিংড়ি উৎপাদিত হয়েছে।
শীলা কাঁকড়ার হ্যাচারি স্থাপন ক্র্যাবলেট উৎপাদন : দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যাপক চাহিদার ভিত্তিতে সমুদ্র উপক‚লবর্তী এলাকায় শীলা কাঁকড়ার চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
জাটকা সংরক্ষণ ও ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন : প্রতি বছর আশ্বিন মাসের প্রথম উদিত চাঁদের পূর্ণিমার দিনসহ আগের চারদিন এবং পরের সতেরো দিনসহ মোট ২২ দিন উপক‚লীয় এলাকাসহ দেশব্যাপী ‘দি প্রটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন অব ফিস রুলস ১৯৮৫ (সংশোধিত) বাস্তবায়নের ফলে ২০১৭-১৮ সালে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে ৫.১৭ লক্ষ. মে. টনে দাঁড়িয়েছে।
মৎস্য আইন বাস্তবায়ন : মৎস্য খাতের উন্নয়ন কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার নিমিত্ত সরকার ইতোমধ্যেই বেশ কিছু নীতি, আইন বিধিমালা ও উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
জেলেদের পরিচয়পত্র প্রদান : মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সানুগ্রহ দিকনির্দেশনায় সরকার মৎস্যসম্পদ ও মৎস্যজীবীদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে যুগান্তকারী কিছু কার্যক্রম গ্রহণ করেছে : যা উন্নয়নের রোল মডেল হিসাবে বিশ্বে              স্বীকৃত। এ প্রকল্পের মাধ্যমে এ যাবৎ ১৬.২০ লক্ষ জেলের নিবন্ধন সম্পন্ন এবং ১৪.২০ লক্ষ জেলের পরিচয়পত্র প্রদান এবং বিতরণ করা হয়েছে।
সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ উন্নয়ন এবং ব্যবস্থাপনা : বর্তমান            কৃষিবান্ধব সরকারের দুরদর্শিতার জন্য আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সীমানা নির্ধারিত হওয়ায় ১,১৮,৮১৩ বর্গ কিমি. এলাকায় মৎস্য আহরণে আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রফতনি এবং স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ মাছ সরবরাহ : মৎস্য পরিদর্শন এবং মান নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত সকল তথ্যাদি সংরক্ষণের জন্য অ্যাকোয়া ফুড সেইফটি আর্কাইভ মৎস্য ভবনে স্থাপন করা হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তন এবং মৎস্যসম্পদ : জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের পরিমাণসহ ধরন ও পরিবর্তন হচ্ছে এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে মৎস্য প্রজনন ও উৎপাদনে, বিশেষ করে দেশীয় প্রজাতির ক্ষেত্রে।
মানবসম্পদ উন্নয়ন : কোনো সংস্থাকে জনমুখী, সময়ের চাহিদার প্রতি সংবেদনশীল, অধিকতর সক্ষম ও কার্যকর করার জন্য মানবসম্পদ উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই ২০১৮-১৯ আর্থিক সালে উন্নয়ন প্রকল্প এবং রাজস্ব খাতের আওতায় ৪ (চার লক্ষাধিক) মৎস্যচাষি, মৎস্যজীবী, সরকারী কর্মচারী এবং এনজিও কর্মীকে অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তথ্যপ্রযুক্তি সেবা প্রদান : আগামী ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে মৎস্য অধিদপ্তরের ডায়নামিক ওয়েবসাইড কার্যকর রয়েছে।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি : বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মৎস্য অধিদপ্তরের আওতায় ১৪টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। যার প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ৩৫৫২.৮৭ কোটি টাকা মাত্র।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি : বার্ষিক সম্পাদন চুক্তির আওতায় ২০১৯-২০অর্থবছরের চুক্তিতে ৪টি কৌশলগত উদ্দেশ্যের বিপরীতে মৎস্যচাষ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ক ১৭টি, সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক ৬টি এবং সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ বিষয়ক ৫টিসহ মোট ২৮টি কার্যক্রমের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় এবং যা অর্জিত হয়েছে।
পরিশেষে বলা যায় যে ১৫ আগস্ট বনাম বাঙালি জাতিকে প্রাণিজ (মৎস্য) প্রোটিন থেকে বঞ্ছিত করার ষড়যন্ত্র যা সফল হয়নি, কারণ মাছ ও অন্যান্য জলজ সম্পদের স্থায়িত্বশীল উৎপাদন নিম্ন হওয়ার পাশাপাশি নিরাপদ খাদ্যের নিরাপত্তা বিধান, জনগোষ্ঠীর পুষ্ঠি চাহিদাপূরণ, রপ্তানি আয় বৃদ্ধি ও অভীষ্ট জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণের মাধ্যমে কাক্সিক্ষত আর্থসামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত হবে। মৎস্য উৎপাদনের অর্জিত সাফল্যকে স্থায়িত্বশীল করে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। য়

খামার ব্যবস্থাপক, মৎস্যবীজ উৎপাদন খামার, গোবিন্দগঞ্জ, গাইবান্ধা, E-mail: Chowdhari_33@yahoo.co, মোবাইল : ০১৭১২৪০৮৩৫৩


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon